লারার রেকর্ড ছুঁয়ে দেখেও ইনিংস ঘোষণা
ক্রিজে ছিলেন অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যে। বলের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ, শরীরী ভাষা ছিল আত্মবিশ্বাসে টইটম্বুর। দক্ষিণ আফ্রিকার ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ভিয়ান মুল্ডারের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল, টেস্ট ক্রিকেটে ব্রায়ান লারার সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের রেকর্ড এখনই হয়তো ইতিহাস হয়ে যাবে। কিন্তু বিস্ময় জাগিয়ে সেই পথে হাঁটলেন না তিনি। মধ্যাহ্ন বিরতিতে ৫ উইকেটে ৬২৬ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে দিলেন দক্ষিণ আফ্রিকা—আর অপরাজিত থাকা অবস্থাতেই থেমে গেলেন ৩৬৭ রানে।১৪৮ বছরের টেস্ট ইতিহাসে এখন পর্যন্ত কেবল একবারই হয়েছে চারশ রানের ইনিংস। ২০০৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যান্টিগায় ৫৮২ বলে ৪০০ রানে অপরাজিত থেকে রেকর্ড গড়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ব্যাটার ব্রায়ান লারা। সেই রেকর্ড ভাঙার সম্ভাবনা থাকলেও মুল্ডার সিদ্ধান্ত নিলেন—সামনের পথ খুলে দিলেও ইতিহাসে অনুপ্রবেশ নয়।
সোমবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বুলাওয়ায়ো টেস্টের দ্বিতীয় দিনে যখন ইনিংস ঘোষণা আসে, তখন ম্যাচে খেলা হয়েছে মাত্র চার সেশন। বাকি ছিল আরও ১১ সেশন। এরপরই ক্রিকেট বিশ্বে শুরু হয় আলোড়ন—সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভক্ত হয়ে পড়ে মতামত। দিন শেষে মুল্ডার ব্যাখ্যা দেন, এই সিদ্ধান্ত তার ব্যক্তিগত মূল্যবোধের প্রতিফলন, “লারা সত্যিই একজন কিংবদন্তি। তার মতো একজন ব্যাটারের দখলে রেকর্ডটা থাকা উচিত। আমি কোচ শুকরি কনরাডের সাথেও কথা বলেছি। উনিও বলেছেন, ‘ওই বিশাল রেকর্ডটা কিংবদন্তির কাছেই থাক।’”
মুল্ডার যোগ করেন, “আমি যদি আবারও এমন সুযোগ পাই, তাহলেও হয়তো একই কাজ করব। জানি না ভবিষ্যতে কী অপেক্ষা করছে, তবে আমার মনে হয়েছে, লারার রেকর্ডটা অক্ষত থাকাই শ্রেয়।”
প্রথম দিনের খেলা শেষে ২৬৪ রানে অপরাজিত ছিলেন মুল্ডার। দ্বিতীয় দিন সকালেই রান বাড়িয়ে গড়েন দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসের সর্বোচ্চ এবং টেস্ট ইতিহাসের পঞ্চম সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। শুধু ব্যাটিং নয়, বল হাতেও ছিলেন দারুণ সফল। জিম্বাবুয়ের প্রথম ইনিংসে ৬ ওভারে ২ মেডেনসহ মাত্র ২০ রানে নেন দুটি উইকেট।
এদিকে ব্যাটিং বিপর্যয়ে থাকা স্বাগতিক জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংসে অলআউট হয় মাত্র ১৭০ রানে। ফলোঅন খেলে দ্বিতীয় ইনিংসে দিন শেষ করে ১ উইকেটে ৫১ রানে। এখনও তারা পিছিয়ে আছে ৪০৫ রানে, বড় হারের শঙ্কায়। কিন্তু দিন শেষে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে শুধু জয় নয়, উঠে আসে একটি অনন্য সম্মানবোধ—যা প্রমাণ করে, ক্রিকেট কেবল সংখ্যার খেলা নয়, মূল্যবোধেরও।