বাংলাদেশ ক্রিকেটে 'আমি' বড়, 'আমরা' নয়
ম্যাচ তখনো বাকি প্রায় ১৪ ওভার। টিভি পর্দায় দেখা যাচ্ছিল শ্রীলঙ্কার এক দর্শক ঘুমাচ্ছেন, ধারাভাষ্যকাররা কথা বলছেন মাঠে নামা একটি পাখি নিয়ে। খেলায় উত্তেজনার কিছুই ছিল না, কারণ ম্যাচের ফল তখন প্রায় নিশ্চিত—বাংলাদেশ হারছে।পাল্লেকেলেতে সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ওয়ানডেতে ২৮৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নামা বাংলাদেশ কখনোই ম্যাচে ছিল না। শেষ পর্যন্ত ৯৯ রানের বড় ব্যবধানে হারে টাইগাররা। তবে ফলাফল নয়, ম্যাচ দেখে বোঝা যায় আরও বড় সমস্যা লুকিয়ে আছে—দলের চেয়ে ব্যক্তি বড় হয়ে উঠছে।
২০ রানে ২ উইকেট হারানোর পর চারে নামেন তাওহিদ হৃদয়। আউট হন ৩৩তম ওভারে। এই দীর্ঘ সময় ব্যাট করে ৭৮ বলে ৫১ রান করেন তিনি, যার স্ট্রাইকরেট মাত্র ৬৫.৩৮। বাংলাদেশ তখন রানের চাপে থাকলেও, হৃদয়ের ব্যাটে ছিল না প্রয়োজনীয় আগ্রাসন।
মাঝে কিছু জুটিও গড়েছেন হৃদয়—তৃতীয় উইকেটে ৫৮ বলে ৪২ রান, চতুর্থ উইকেটে ৪৩ রান এবং পঞ্চম উইকেটে ১৯ রান। কিন্তু এসব জুটিতে তার নিজস্ব অবদান খুবই কম ছিল। ওভারপ্রতি রান চাহিদা যখন ৮-এর কাছাকাছি, তখনও তিনি ফিফটির জন্য নিরাপদ খেলা চালিয়ে যান। তার এই ইনিংস দলের প্রয়োজনে কোনো কাজে আসেনি বললেই চলে।
শুধু হৃদয় নন, পারভেজ ইমন (৪৪ বলে ২৮) ও জাকের আলী (৩৫ বলে ২৭)– তাদের ইনিংসেও লক্ষ্য ছিল না, ছিল না সময় ও পরিস্থিতির বিবেচনা। ব্যাটাররা যেন খেলছেন নিজেদের নামের পাশে রান বাড়াতে।
এমন ‘আমিত্বে’র প্রবণতা নতুন নয়। আগেও দেখা গেছে তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম কিংবা মাহমুদউল্লাহদের ইনিংসে ব্যক্তিগত লক্ষ্যের প্রাধান্য। বিশেষ করে তামিমের ৭৮টি টি-টোয়েন্টিতে মাত্র ১১৬ স্ট্রাইকরেট দলের থেকে নিজের সুরক্ষাকেই বড় করে তুলে।
এই সিরিজেই গলে শান্ত ডাবল সেঞ্চুরির জন্য ১১ ওভার বাড়তি ব্যাটিং করেন। ড্র নিশ্চিত হলেও জয় আসে না। সেঞ্চুরি উদযাপন করেন এমনভাবে, যেন দল জিতেছে—অথচ জয় নয়, লড়ে ড্র করেছে দল।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই সংস্কৃতি এখন বড় প্রশ্নের মুখে। দল নয়, ব্যক্তি বড় হয়ে উঠছে বারবার। নতুন প্রজন্ম হয়তো শিখছে, দলকে জিতিয়ে না হোক, নিজের নামটা বড় করে রাখাই সাফল্য।