সাক্ষাৎকারের শুরুতেই বাটলার বলেন, “আমি যা করেছি, তা সত্যিই ব্যতিক্রম। আগে এমনভাবে কেউ নারী ফুটবলে এসে বদলে দেয়নি।” তিনি দাবি করেন, তার আগমনের পরেই নারী ফুটবলে একটি নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। তার ভাষায়, “একজন কোচ হিসেবে আপনাকে সাহসী হতে হবে—তরুণদের সুযোগ দিতে হবে। না দিলে আপনি কখনো জানতে পারবেন না তারা কতটা ভালো।”
বাটলার মনে করেন, সিনিয়র জাতীয় দলের সাফল্যের জন্য কোচেরই যুব দলের তদারকি করা উচিত। লাইবেরিয়া ও বতসোয়ানায় কাজ করার সময় তিনি এই পদ্ধতি অনুসরণ করে সফলতা পেয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন।
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ফুটবলে বয়স আসলে কোনো ব্যাপার নয়, এটি মনোভাব এবং দক্ষতার বিষয়। তরুণদের প্রতি তার আস্থা অটুট এবং তিনি বলেন, “তরুণরাই ভবিষ্যৎ।”
তবে এই নতুন কৌশল এবং দলগঠনের পথ মোটেই সহজ ছিল না। এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে অধিনায়ক সাবিনা খাতুনকে বেঞ্চে বসানো এবং মাসুরা পারভীনকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। এই প্রসঙ্গে বাটলার বলেন, “আমি যে ফুটবল খেলাতে চেয়েছি, তা হাই প্রেস এবং উচ্চ তীব্রতার। সাবিনা সে গতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছিল না। আমি তাকে সম্মান করি, কিন্তু তাকে দলে রাখা সম্ভব ছিল না।”
তিনি আরও বলেন, “এটা কোনো বিদ্বেষ নয়, কেবল কৌশলগত সিদ্ধান্ত।” একই যুক্তিতে মাসুরাকেও দলে রাখা যায়নি। কোচ দাবি করেন, তারা বিদ্রোহ করে তাকে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করেছিলেন, যা ছিল “মূলগতভাবে ভুল”।
বাটলার জোর দিয়ে বলেন, বাছাইপর্বের দলে নির্বাচনে কোনো পক্ষপাতিত্ব ছিল না। বরং সভাপতি তাকে অনুরোধ করেছিলেন কিছু পুরোনো খেলোয়াড়কে ফেরানোর জন্য, যাদের মধ্যে মারিয়া, শিউলি, শামসুন্নাহার, মনিকা, ঋতু ও রূপনার নাম উল্লেখ করেন। তবে অন্য সিনিয়র খেলোয়াড়রা তখন ছিলেন ভুটানে, ফলে তারা সুযোগ পাননি।
সিনিয়রদের সঙ্গে দূরত্বের বিষয়ে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি কখনোই তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করিনি। আমি শুধু তাদের নিয়ম মানার কথা বলেছি, যেমন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো, ফোন ব্যবহার সীমিত রাখা।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমি কঠোর নই, বরং শৃঙ্খলার পক্ষে।”
ফুটবল কৌশল নিয়েও বাটলারের চিন্তাভাবনা বিশদ। তিনি বলেন, তার মূল ফর্মেশন ৪-১-৪-১ অথবা ৪-৩-৩ হলেও খেলোয়াড়দের বিভিন্ন পদ্ধতিতে অভ্যস্ত করানোই তার লক্ষ্য। তার ভাষায়, “সিস্টেম খেলোয়াড় তৈরি করে না, খেলোয়াড়রাই সিস্টেম তৈরি করে।”
হাই লাইন ডিফেন্স নিয়ে প্রশ্নে তিনি বলেন, “প্রতিদিন অনুশীলনের মাধ্যমে আমরা সেটা গড়ে তুলি। যদি ফরোয়ার্ডরা সামনে থেকে চাপ না দেয়, তাহলে হাই লাইন ভেঙে পড়ে।” ফিটনেস ঘাটতির অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, “আমরা প্রায়ই ম্যাচের শেষ দিকে শক্তিশালী থাকি। এটা ক্লান্তি নয়, কৌশলগত হিসাব।”
গোলকিপার রূপনার ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, “সে অনেক উন্নতি করেছে। এখন আত্মবিশ্বাসীভাবে খেলা পড়তে পারে এবং আমাদের ডিফেন্সকে সহায়তা করে।” একইভাবে নবীরনের পজিশন পরিবর্তনের পেছনের কাহিনী জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি তাকে সেন্টার-ব্যাক বানাতে চেয়েছিলাম। কোহাতির সঙ্গে সে এখন আমাদের সেরা জুটি।”
মিডফিল্ডারদের ক্ষেত্রেও নতুন ব্যাখ্যা দেন বাটলার। মনিকাকে ১০ নম্বর পজিশনে, মারিয়াকে আক্রমণাত্মক রোল এবং স্বপ্নাকে পাসিংয়ের জন্য ব্যবহার করছেন তিনি। তবে স্বপ্নার বল ছাড়া অবদান বাড়াতে হবে বলেও উল্লেখ করেন।
সাক্ষাৎকারের শেষ দিকে বাটলার বলেন, “আমার লক্ষ্য একটি কৌশলগতভাবে তুখোড়, শারীরিকভাবে প্রস্তুত এবং মানসিকভাবে দৃঢ় দল গড়ে তোলা। আমরা সে পথেই হাঁটছি।”